সৌর্ন্দয্যের আধার বান্দরবন ঘুরে আসলাম [তথ্য + ছবি ব্লগ]

অবশেষে ঘুরে আসলাম বাংলার অপার সৌন্দর্য্যের লীলাভুমি বান্দরবন ।যদি জানতে চান কেমন লাগলো তাহলে এক কথায় বলবো
ধনধান্য পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক, সকল দেশের সেরা
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি


অসাধারণ লেগেছে বান্দরবন বারবার এই গানের লাইনটাই মনে এসেছে এত সুন্দর আমার দেশ আর আমরা গালি দেই কি দেশে জন্মালাম কিছুই নেই ।


প্রথম থেকেই শুরু করি


আমরা ৭ জন বন্ধু মিলে অনেক দিন আগে থেকেই প্লান করে রেখেছি রাঙ্গামাটি যাবো কিন্তু যাবার এক সপ্তাহ আগে সামুর কিছু পোস্ট দেখে সিদ্ধান্ত দিলাম পরিবর্তন করে রাঙ্গামাটি নয় আমরা যাবো বান্দরবন ।সবাইকে বললাম সবাই রাজি হলো এবার রওয়ানা দেবার পালা
কুমিল্লা হতে রাতের ট্রেন ২.৩০ মিনিটে কিন্তু বেরসিক ট্রেন আসলো ৪ টায় ।সাড়ে সাতটায় পৌছলাম চট্রগ্রাম তারপর মিনিবাস দিয়ে সরাসরি বদ্দারহাট বাস টার্মিনালে পৌছে গেলাম ।
বান্দরবন যাবার ভালো কোন বাস দেখলাম না বাধ্য হয়ে পূবার্ণীতে উঠে পড়লাম ভাড়া নিলো পার মাথা ৭০ টাকা করে ।যেতে যেতে লাগলো প্রায় আড়াই ঘন্টার মতো ।সাড়ে বারোটার মাঝেই হোটেল পেয়ে গেলাম এখন যেহেতু অফ সিজন তাই হোটেল ভাড়াও অনেক কম ৩ রুমের এক বিশাল হোটেল পেলাম ভাড়া মাত্ত ৮০০ টাকা নিলো ।


তাড়াতাড়ি করে গোসল করে প্রস্তুতি নিয়ে খাবার খেতে তাজিংডং হোটেলে গেলাম খাবার খেয়ে বের হলাম গাড়ীর খুজে আমরা ঠিক করলাম আজকে কিছু জায়গায় যাবো আর কালকে বাকীগুলো দেখবো গাড়ীওয়ালা দুই দিনের জন্য ৩৮০০ টাকা চায় আমরা বলি ৩০০০ দিবো তারপর ৩৫০০ দিবো কিন্তু কেউ একটাকা কমাতে রাজী নয় সবাই দেখলাম এক জোট ভাড়া কমাবে না অবশেষে বাধ্য হয়ে ৩৮০০ টাকায় রাজী হলাম ।

 আমরা সবতো তেদড় তাই সব গাড়ীর উপরে উঠে গেলাম মানে ছাদে আরকি এত উল্টাপাল্টা রাস্তা তার উপর আমরা ঝিম ধরে সব গাড়ীর উপরে অসাধারন লাগলো


ড্রাইভার প্রথমে  আমাদের নিয়ে গেলো


নীলাচল অসাধারণ লাগলো এত উচুতে পুরো শহর দেখা যাচ্ছে কিছুক্ষনের জন্য বাকরুদ্দ হয়ে গেলাম ওয়াও ওয়াও ........


ওখানে গাড়ী রাখার জন্য দিতে হলো ৫০ টাকা ।কিছুক্ষণ ছবি উঠানোর আর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার পর চলে আসলাম মেঘলা ।
মেঘলা হলো পার্কের মতো একটা জায়গা এর ভিতরে লেক আছে লেকের উপরে দুটো অসাধারণ ঝুলন্ত সেতু আছে রাঙ্গামাটির জুলন্ত সেতু হতেও আর্কষনীয় সেতু তার নিচে লেক দেখে আর স্হির থাকতে পারলাম না সবাই একসাথে সেতু থেকে লাফ দিয়ে পানিতে ।




এবার সরাসরি চলে গেলাম বৌদ্ধ মন্দিরে এটাকে স্বর্ন মন্দির বলা হয় মন্দিরের একদম উপরে একটু খানি স্বর্ন আছে এজন্য নাকি এই নাম ।


মন্দিরটা খূবই সুন্দর কিছুক্ষণ ওখানে সময় কাটিয়ে একটা পাহাড়ের অনেক চূড়ায় উঠলাম সুযাস্ত দেখার জন্য কিন্তু সূর্যই খুজে পেলাম না তাই সন্ধ্যার দিকে গাড়ী বিদায় দিয়ে হোটেলে ফেরত আসলাম


২য় দিন খুব ভোরে নাস্তা করে সব কিছু নিয়ে হোটেল থেকে লগআউট করে সব গাড়ীতে উঠলাম উদ্দেশ্য শৈলপ্রপাত চিম্বুক নিলগীরি হয়ে রুমাতে যাবার ।


শৈলপ্রপাত ঝরনার মতো একটা জায়গা শৈলপ্রপাত হয়ে গেলাম নীলগীরি গেলাম ।নীলগিরি এক কথায় যদি বলি অসাধারন উচুতে উঠে চারদিকে তাকালে যা দেখা যায় তার কোন তুলনা নেই ।


নীলগিরিতে যে ব্যাপারটা সবচেয়ে কঠিন লেগেছে তা হলো আমি উচুতে দাড়িয়ে আছে অনেক দুরে আমার চোখের সামনে দেখলাম একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বৃষ্টি হচ্ছে আর চারপাশে রোদ এই দৃশ্য দেখে কিছুক্ষনের জন্য হারিয়ে গেলাম ।নিচের ছবিতে দেখুন


নিলগিরি পর্ব শেষ করে চিম্বুক দেখলাম তারপর সরাসরি গেলাম রুমাতে উদ্দেশ্য রুমা বাজার হয়ে বগালেক + কেওক্রাডাং ।


রুমাতে গিয়ে নৌকা করে সাংগু নদী দিয়ে গেলাম রুমা বাজার যেতে ৪৫ মিনিটের মতো লাগে আমরা গেলাম নৌকার ছাদে করে পার মাথা ৩০ টাকা করে নিলো আর  রিজার্ভ নিলে ৮০০ টাকা নেয় রিজার্ভ নেওয়ার দরকার নাই কারণ প্রতি ৩০ মিনিট পর পর নৌকা ছাড়ে ।


রুমা বাজার নেমে হোটেল খুজতে লাগলাম পেয়েও গেলাম একখান ৪৫০ টাকা নিলো এক রুম ৩ বেড আমরা ৭ জনের জন্য যথেষ্ট ।
এবার টার্গেট বগালেক হয়ে কেওক্রাডাং ।বগালেক যেতে হলে অবশ্যই টুরিষ্ট গাইড নিয়ে যেতে হয় না হয় আর্মি যেতে দেয়না ।আমরা রাতেই রুমা বাজারে গিয়ে টুরিষ্ট গাইড খুজলাম এবং কাল সকাল ৭ টার মধ্যেই আসার জণ্য বললাম ।টুরিষ্ট গাইডকে প্রতিদিনের জন্য ৩০০ টাকা করে দিতে হয়।তবে আমরা যেহেতু জানতাম না তাই ৪০০ টাকা নিলো যদি ৩০০ টাকার বেশি চায় তাহলে আর্মির ক্যাম্পে রিপোর্ট করবেন সোজা করে দিবে ।
বগালেক দুই ভাবে যাওয়া যায় চান্দের গাড়িতে ১১ কিমি তারপর ২ ঘন্টা হাটতে হয় অথবা ঝিরিপথ [বনের মধ্য দিয়ে ঝরনার ফলে যে রাস্তা তৈরী হয়েছে] দিয়ে সাড়ে পাচ ঘন্টা হাটতে হয়।আমরা ঠিক করলাম চান্দের গাড়িতে যাবো তবে আসার পথে ঝিরিপথে আসবো ।


সকালে গাইড নিয়ে রওয়ানা দিলাম চান্দের গাড়িতে ছোট এক গাড়িতে ২৮ জন লোক আমরা স্বভাবমতো ছাদেই উঠলাম পার মাথা ৫০ টাকা ভাড়া তবে রিজার্ভ ১৪০০ টাকা নেয়।


খুবই ঝুকিপূর্ন রাস্তা দেখলে মনে হয় মূর্ত্যুর হাতছানি এই গাড়ি কি করে এই রাস্তা উঠে এখনো মাথা ধরেনা।পথে পুলিশের কাছে নাম ধাম সব দিতে হলো ।
১১ কিমি যাবার পর হাটা শুরু করলাম ২ ঘন্টা পাহাড় পাড়ি দিয়ে পৌছলাম বগালেক [সমুদ্রপৃস্ট হতে ২৭০০ ফুট উপরে লেক তবে মতান্তরে ১২শ ফুট]


সেনাবাহিনীর কাছে নাম ধাম বন্ধক রেখে একটা কটেজে উঠলাম পার মাথা ১০০ করে আর খাওয়া খরচ ।


দুপুরে খাবার পর বিশ্রাম না নিয়েই কেওক্রাডাও এর উদ্দেশ্য দিলাম সাড়ে সাত ঘন্টা লাগরো কেওক্রাডাং ঘুরে আসতে রাস্তায় কিছু ঝরনা পাবেন অসাধারণ ।
রাতে গানের আসর +ফাজলামি করার পর দিলাম ঘুম সকালে উঠেই কুমিল্লা যেতে হবে যে ।


এবার শুরু আসল এ্যাডভান্ঝর ।ঝিরি পর দিয়ে সাড়ে পাচ ঘন্টা হাটা ।সেনাবাহিনী হতে বিদায় নিয়ে আল্লার নামে দিলাম হাটা অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ ঝিরি পথ যে কত সুন্দর তা কল্পনা করতে পারবেন না ঝরনার পানি যাচ্ছে বড় বড় পাথর এগুলোর উপরে দিয়ে হেটে চলছি আমরা কি বলবো সাড়ে সাচ ঘন্টা হাটার পরও কাল্তি আসেনি ।ঝিরিপথে একটা বড় ঝরনা পাবেন এতে অবশ্য ই গোসল করবেন ।আমাদের টুরিষ্ট গাইডটা ছিলো খুবই ভালো আমাদের জন্য একটু পর পর পেপে কলা পেয়ারা নিয়ে আসতো ।ঝিরি পথে রওয়ানা দেবার আগে প্রায় ১০০ টা পাহাড়ী কলা কিনে নিয়েছিলাম মাত্ত ৬০ টাকায় পুরো রাস্তায় কলা খেতে খেতে এসেছি।
ঝিরি পথের কিছু ছবি


Bandorbon
এক কথায়.....................


আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর হলো বান্দরবন
নিরাপত্তা নিয়ে একটু ও ভাববেন না সেনাবাহিনী এত একটিভ যে ভাবার দরকার হবেনা
কোন মেয়ে একলা গেলেও সমস্যা নেই কারণ ওখানকার সবাই জানে যদি টুরিষ্টের গায়ে একটু আছড় পড়ে তাহলে সেনাবাহনী গুল্লি করে দিবে ।আপনার নুন্যতম কিছু হলে টুরিষ্ট গাইডের খবর করে দিবে ।টুরিষ্ট গাইড আমাদেরকে যেটা বলবো যে এখানে যদি কোন টুরিষ্টের কোন ক্ষতি হয় তাহলে আর্মির মাইর মাফ নাই তাই টুরিষ্টরা সবসময় নিরাপদ ।স্যালুট আর্মি ভাইদের
Bangladesh Army


আমার একদিনেই বগালেক আর কেওক্রাডাং ঘুরে এসেছি যা ৯৯.৯৯% পারেনা কারণ এত হাটা অধিকাংশদেরই পক্ষে সম্ভব নয় তাই বগালেক এ অধিকাংশরাই ২ রাত থাকে 
রুমা বাজার হতে অবশ্যই ঝিরি পথে যাবেন নতুবা আসার সময় আসবেন ।ঝিরি পথ দিয়ে না গেলে অনেক বড় কিছু দেখা হতে বন্ঞিত হবেন ।কখন যে সময় কাটবে তা টেরই পাবেন না ।
আমাদের গাইডটা ছিলো খুবই ভালো নাম বেলাল রুমা বাজারে গিয়ে নাম বললেই হবে 


অবশ্যই যাবেন বান্দরবন খুব সুন্দর ট্যুর দিয়ে আসলাম তবে আবারও যেতে হবে কারণ পুরোটা ঘোরা হয়নি পরের বার গেলে তাজিংডং+চাপাহাফং চুড়াতে +তিন্দু +ঝিরিপথে যাবার সময় মধ্যপথে একটা লেক নাকি আছে যার চারদিকে ঝরনা পড়ে এই জায়গা গুলো অবশ্য।ই যাবো ।আমাদের মোট (ব্যক্তিগত খরচ ছাড়া)২৫০০ টাকা করে খরচ হয়েছে ।সবাই ভালো থাকবেন আর হ্যা বিদেশ দেখার আগে আমাদের দেশটা দেখুন ।
আর অবশ্যই কোন ব্যাপারে জানতে ইচ্ছা হলে কমেন্টস করবেন 
পরবর্তীতে নতুন কোন জায়গা নিয়ে লিখবো সেই পযর্ন্ত শুভ ঘুরাঘুরি

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন