ঘুরে আসুন কক্সবাজার সেন্টমার্টিন আর ছেড়াদ্বীপ [ ভ্রমন ব্লগ পার্ট ১]

জম্পেশ শীতের মাঝে মানুষ যখন নিজের পরিবার অথবা নব বিবাহিতরা তাদের নবপরিনীতাদের নিয়ে সমুদ্র দেখতে যায় তখন আমরা ৫ ধইনচা হাড় কাপানো শীতের রাতে ট্রেনের লেইট সমাচার শুনে ট্রেনের টিকিটগুলো কাউন্টারে ফেরত দিয়ে চিটাগাং এর বাস ধরার জন্য রাত ১০ টার দিকে কুমিল্লার নুরজাহান
ভাই ব্রাদাররা বাসের জন্য অপেক্ষারত

হোটেলের সামনে দাড়ালাম এবং দুই ঘন্টা লেইটে শ্যামলির বাস ধরলাম সরাসরি কক্সবাজার নামাবে ভাবলাম সকাল ৭/৮ টার ভিতরে পৌছতে পারলে মহেশখালী এলাকাটা দেখবো কিন্তু গরিবের কপালে কি এত সুখ সহ্য হয় ,রাস্তায় জ্যাম আর বাসের শম্ভুক গতির কল্যাণে সকাল ১১ টায় পৌছলাম তাই মহেশখালি যাবার প্ল্যান বাতিল ঘোষনা দিলাম ।

এবার হোটেল খোজার পালা, প্রথমে লাবণী বিচের একদম কাছের হোটেলগুলোতে গেলাম কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় কলাতলী রোডের হোটেলগুলোতে গেলাম সেখানে অনেকটা সস্তাই মনে হলো নিয়ে নিলাম ডবল বেডের একটা রুম হোটেল সীব্রীজে ।

** টাকা পয়সা কম খরচ করতে চাইলে সিগার্ল, কল্লোল এই হোটেলের পিছনের রাস্তাতে মানে  কলাতলি রোডের হোটেলগুলোতে চলে যান কমে পাবেন যদিও  একটু দুরে কিন্তু রিকশা  ভাড়া পড়বে প্রতিজন ৫ টাকা করে ,হিসেব করলে অণেক টাকাই বাচবে ।

হোটেলে দ্রুত সবাই ফ্রেশ হয়ে বিচে গোসল করার পোশাক পড়ে নিচে গেলাম খাবার খাওয়ার জন্য গিয়েই মনে হলো কক্সবাজারে এবার গলা কাটা যাবে খাবারের দাম অনেক বেশি মনে হলো ।

খাবার দাবার শেষ করে সরাসরি লাবণী বিচে নামলাম সমুদ্রের পানি গরম কিন্তু বেরসিক বাতাসের কারণে শরীরে ঠান্ডা লাগা শুরু করলো কিন্তু পরাজয় ডরে না বীর এর তত্ত্ব মেনে টানা ২/৩ ঘন্টা সাগরের সাথে মিতালি করে উঠলাম

** সাগরের পাড়ে বা পানিতে খুব একটা ঠান্ডার অনুভতি হয়না তাই শীতের ভয়টা না করলেও চলবে 

সারা শরীরে বিচের বালু নিয়ে হোটেলে ফিরে সবাই ফ্রেশ হয়ে নিলাম তারপর দুপুরের খাবার খেয়ে ইনানী বিচে সূর্যাস্ত দেখবো এইরকম একটা প্ল্যান করলাম এবং চান্দের গাড়ী ভাড়া নিলাম যেহেতু আমরা এ্যাডভেন্জার পছন্দ করি তাই সব চান্দের গাড়ীর ছাদে 
সব গাড়ীর ছাদে শুধু লেখক ছবি তোলায় ব্যস্ত


**ইনানী বিচ যাবার জন্য তিনটা বাহন আছে প্রথমটা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দিয়ে (ফ্যামিলির জন্য আদর্শ বাহন, দাম নিবে ৬০০/৭০০টাকার মতো) দ্বিতীয়টা হলো সিএনজি দাম নিবে  ৪০০/৫০০ এর মতো আরেকটা হলো  চান্দের গাড়ী দাম নিবে ৮০০/৯০০ এর মতো এই গাড়ীগুলো আপনাকে নিয়ে হিমছড়ি আর ইনানী বিচ যাবে রাস্তায় দুইঘন্টার মতো ব্রেক  দিবে তারপর আপনাকে আবার কক্সবাজার নিয়ে আসবে


প্রথমেই গেলাম হিমছড়ি আমি আর আমার এক বন্ধু অনেকবার এই পাহাড়ে গিয়েছি বলে আমরা চলে গেলাম হিমছড়ি বিচে আর বাকিদের পাহাড়ে উঠার পরামর্শ দিলাম । যারা পাহাড়ে কষ্ট করে উঠেছে তারা ফিরে এসেই "ধুর এইটা একটা পাহাড় হইলো আর জীবনে উঠুম না হুদাই কষ্ট কইরা উঠলাম"
হিমছড়ির বিশাল বিচ


আবার ও আমাদের চান্দের গাড়ী চলা শুরু করলো আমরাও গান গাওয়া শুরু করলাম গাড়ী চলে না চলেনা চলেনারে গাড়ী চলেনা ........টুং টুং টাং ............



ইনানী বিচে প্রবেশ করলাম সূযার্স্ত দেখার জন্য ,ইনানী বিচের প্রবালগুলোতে পা রেখে রেখে ভিতরের দিকে গেলাম প্রবালে ঢেউ গুলো এসে প্রবালে আছড়ে পড়ছে সত্যি চরম দেখার মতো দৃশ্য যাই হোক অনেকক্ষন বসে রইলাম ছবি তুললাম তারপর সূযার্স্ত দেখার পর আবার কক্সবাজারে উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলাম রুমে ফিরে সবাই ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করে নিলাম ।
ইনানী বিচের সূর্যাস্ত

আগামীকাল সকালে আবার সেন্টমার্টিন যাবার প্ল্যান তাই সেন্টমার্টিন যাবার জাহাজের খোজ নিতে
লাগলাম অবশেষে কেয়ারি সিন্দাবাদের অফিসটা খুজে পেলাম আগামীকালকের টিকেট কনফার্ম করে সি বিচে ফিরে আসলাম

** সেন্টমার্টিন যাবার জন্য অনেকগুলো জাহাজ সার্ভিস আছে যেকোন একটাতে গেলেই হলো আমরা গিয়েছি কেয়ারি সিন্দাবাদে করে ,আসা যাওয়ার টিকেট একসাথে কাটতে হবে আপনি যেদিনই ফিরে আসেন আসেন সেটা কোন সমস্যা না ।টিকেট র দাম নিচতলা ৪৫০ আর উপরতলা ৭৫০ টাকা,খুব বেশি  আরামপ্রিয়  না হলে নিচতলার টিকেট কাটুন কারণ প্রায় সবাই জাহাজ ছাড়ার সাথে সাথে জাহাজের বারান্দায় চলে আসে আর আপনি ইচ্ছা করলে দুতলায়ও চলে যেতে পারেন কেউ বাধা দিবেনা ‌আর কক্সবাজর থেকে টেকনাফ জাহাজ ঘাটে কি আপনি নিজে যাবেন ,নাকি জাহাজ কোম্পানির গাড়ীতে যাবেন সেটাও বলতে হবে যদি কক্সবাজার থেকে টেকনাফে জাহাজ কোম্পানির গাড়ী দিয়ে যেতে এবং আসতে চান তাহলে টিকেটের সাথে অতিরিক্ত মোট ২৫০ টাকা দিতে হবে ।আমার পরার্মশ হলো জাহাজ কোম্পানির গাড়ীতে যান তাহলে গাড়ী খোজার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবেন ।আর  কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে লাগে ২ ঘন্টা আর টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে প্রায়  আড়াইঘন্টার মতো লাগে




সি  বিচে প্রবেশ করেই দেখলাম তাজা তাজা মাছ আর কাকড়া তেলে দিচ্ছে ,লোভ সামলাতে না পেরে রুপচাদা চিংড়ি আর কাকড়া মাছ খাপুস খুপুস করে খাওয়া শুরু করলাম আহ শান্তি :)


রাতের সমুদ্র আসলেই অসাধারণ, সমুদ্রের গর্জন সাথে বাতাস অনেকক্ষণ বসে বসে গান গাইলাম তারপর একেবারে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে আসলাম তারপর অনেকক্ষণ কার্ড খেলে দিলাম ঘুম সকালে সকালে  উঠতে হবে যে ....................................

প্রথম পার্ট এখানেই সমাপ্ত দ্বিতীয় পর্বে সেন্টমার্টিণ


আর কোন ব্যাপারে পরামর্শ দরকার হলে আওয়াজ দিবেন

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন